বিদআতির ভয়াবহ ৪ টি পরিনাম

Jul 13, 2024
Islam
বিদআতির ভয়াবহ ৪ টি পরিনাম

বিদআতির ৪ টি পরিণাম:

১. إن الله حجب التوبة عن كل صاحب بدعة حتى يدع بدعته" رواه الطبراني في الكبير، وصححه الألباني في صحيح الترغيب
আল্লাহ কোন বিদআত সৃষ্টিকারীর তাওবা গ্রহণ করবেন না যতক্ষণ সে বিদআতের মধ্যে লিপ্ত থাকবে।
(আল-মুজামুল আওসাত-তিবরানী (র) : ৪৭১৩)


২. বিদআতিরা হাউজে কাওছার এর পানি পাবে না
বুখারি- ৬৫৮২-৬৫৮৭)

إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ
সাহল ইবনু সা'দ (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)  বলেছেনঃ আমি তোমাদের আগে হাউযের নিকট পৌঁছব। যে আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে, সে হাউযের পানি পান করবে। আর যে পান করবে সে আর কখনও পিপাসার্ত হবে না। নিঃসন্দেহে কিছু সম্প্রদায় আমার সামনে (হাউযে) উপস্থিত হবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। এরপর আমার এবং তাদের মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে।  (বুখারি - ৬৫৮৩)

فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي فَيُقَالُ إِنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ سُحْقًا بُعْدًا يُقَالُ سَحِيقٌ بَعِيدٌ سَحَقَهُ وَأَسْحَقَهُ أَبْعَدَهُ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তখন বলব যে এরা তো আমারই উম্মাত। তখন বলা হবে, তুমি তো জান না তোমার পরে এরা কি সব নতুন নতুন কথা ও কাজ সৃষ্টি করেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তখন আমি বলব, আমার পরে যারা দ্বীনের ভিতর পরিবর্তন এনেছে তারা আল্লাহর রহমত থেকে দূরে থাকুক। ( বুখারি- ৬৫৮৪)


৩. مَنْ أَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا أَوْ آوَى فِيهَا مُحْدِثًا، فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلاَئِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ، لاَ يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلاَ عَدْلٌ،
যে ব্যক্তি বিদ্‌’আতি কর্মকাণ্ড করে, বিদ্‌আতীকে আশ্রয় দেয়,সাহায্য করে, তার উপর আল্লাহ্‌, ফেরেশতা ও সকল মানুষের অভিসম্পাত। আল্লাহ তার কোন নফল ও ফরয ‘ইবাদাত কবূল করেন না।
(বুখারি - ৩১৭২)

৪. مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ ‏
আয়িশাহ (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রবর্তন করবে যা তাতে নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।

৫.
أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلاَفًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ ‏"
রাসূল (সা.) বলেনঃ আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্ভীতির, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে (আমীর) একজন হাবশী গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহ্গণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে। সাবধান! (ধর্মে) প্রতিটি নবাবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নবাবিষ্কার হলো বিদ’আত এবং প্রতিটি বিদ’আত হলো ভ্রষ্টতা।
(আবু-দাউদ- ৪৬০৭


আমাদের সমাজে সুন্নাতের নামে প্রচলিত কিছু বিদ’আতঃ
১, সম্মান করার নামে কদমবুসি করা (পা ছুয়ে সালাম করা)
২, নতুন দোকান, বাড়ি, অফিস বা গাড়ি উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে কুরান খতম , মিলাদ মাহফিল বা খতমে গাউসিয়া পড়া।
৩, ছেলে বা মেয়ের পরীক্ষা, বিদেশে যাত্রার প্রাক্কালে, বিপদ থেকে রক্ষা বা আর্থিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন আলেম বা মৌলভী দ্বারা কুরআন খতম করানো।
৪, হাফেজ দ্বারা খতমে সাবিনা পড়ানো।
৫, রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশিত দুরুদ ছাড়া অন্য দুরুদ পড়া। যেমন—দুরুদে লাখি, দুরুদে তাজ, দুরুদে হাজারী, দুরুদে মুক্কাদাস, দুরুদে নারীয়া দুরুদে মাহী, দুরুদে মুজাদ্দেদিয়া, দুরুদে কাদেরিয়া, দুরুদে চিস্তিয়া, দুরুদে নকশ বন্দিয়া বা অন্য সকল দুরুদ যা ব্যক্তি বিশেষ কর্তৃক রচিত।
৬, রাসুলের(সাঃ) এর উপস্থিতি মনে করে দাঁড়িয়ে দুরুদ পড়া।
৭, ইসতিনজার ক্ষেত্রে ঢিলা বা টয়লেট পেপার দিয়ে পুরুষাঙ্গ হাতে ধরে এদিক ঐদিক হাটা হাটি কিংবা চল্লিশ কদম হাটা, মাটিতে জোরে জোরে পা মারা, এক উরু দিয়ে অন্য উরু তে চাপ দেয়া , যা ভদ্রতা, সভ্যতা , সুরুচি দ্বীনি মর্যাদা ও লজ্জার বিপরীত।
৮, আযানের পূর্বে সালাত ও সালাম পেশ করা।
৯, সালাত শুরু করার পূর্বের ‘ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়ালিল্লাযি’ এই দোয়া পাঠ করা।
১০, মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ করে পড়া।
১১, সালাতের শেষে ইমামে নেতৃত্বে মোনাজাত আবশ্যিক মনে করা।
১২, জুমআর খুতবার সময় ইমাম কারুকার্য সম্পন্ন ও লম্বা লাঠি ব্যবহার করা।
১৩, রোজার নিয়্যাত মুখে মুখে বলা।
১৪, কোন পীর অলীর মাজার জিয়ারত করা। (কবর জিয়ারত করা যাবে)
১৫, রবিউসসানির ১১ তারিখে ফাতেহা ইয়াজদাহুম এর নামে বড় পীর আব্দুল কাদের জিলানী সাহেবের নামে ফাতেহা বা উরস করা।
১৬, শবে বরাত ও শবে মেরাজের বিশেষ সালাত পড়া।
১৭, নারায়ে রিসালাত ও নারায়ে গাউসিয়া স্লোগান দেয়া।
১৮, হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়ে প্রথমে বায়তুল্লাহ না গিয়ে সরাসরি মদীনা শরীফ জেয়ারত করা।
১৯,তাসবীহের ছড়া দিয়ে তাসবীহ গননা করা বিদ’আত, আঙ্গুলের গিরা দ্বারা গননা করা সুন্নাত। কেননা আঙ্গুল সমূহ হাশরের ময়দানে সাক্ষ্য দেবে (আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি)
২০, কুরআন তিলাওয়াতের সময় কানে মুখে হাত দিয়ে চেহারা বিকৃত করে তেলাওয়াত করা এবং তেলাওয়াত শেষে ‘সদাক্বাল্লাহুল আ’যীম’ বলা।
২১, মীলাদ-কিয়াম করা
২২, জামায়াতবদ্ধ বা সম্মিলিত যিকির করা
২৩, শুধু আল্লাহ বা ইল্লাল্লাহ যিকির করা (বলতে হবে-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)
২৪, কুলখানী, চেহলাম বা চল্লিশা এবং মৃতের উদ্দেশ্য খানা খাওয়ানো
২৫, আযান ইকামতের মধ্যে বা অন্য যেকোনো সময় রাসুল সা. এর নাম শুনলে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে লাগানো
২৬, কুরআন নীচে পড়ে গেলে লবণ কাফফারা দেয়া, সালাম করা,কপালে লাগানো ইত্যাদি
২৭, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করা। যে কোন সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করলে সালাত বাতিল হয়ে যায়
২৮, মৃত ব্যাক্তির কাজা নামাজের কাফফারা দেয়া
২৯, ৭০ হাজার বার কালিমা খতম করা বা দল বেধে লক্ষ বার কালেমা খতম করা
৩০, অজুতে ঘাড় মাসেহ করা
ইত্যাদি ইত্যাদি............আরো অসংখ্য।

বিদ’আতীদের পরিনামঃ
আল্লাহ বলেছেনঃ
"আপনি বলে দিন, আমি কি তোমাদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত আমলকারীদের সম্পর্কে জানিয়ে দিব? (দুনিয়াবী জীবনে) যাদের সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে গেছে। অথচ তারা ভাবে যে, তারা সুন্দর আমলই করে যাচ্ছে।"
***সুরা কাহফঃ আয়াতঃ ১৮: ১০৩-১০৪।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ
"তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা হতে বিরত থাক। নিঃশ্চয় প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই বিদআত ও প্রত্যেক বিদআতই গোমরাহী।"
***আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাতঃ ১৬৫।
"বিদআতীর উপর আল্লাহ এবং ফেরেশতা ও সকল মানুষের লা‘নত বর্ষিত হয় এবং বিদআতীর কোন আমলই কবুল হয় না।"
***বুখারীঃ ৩১৮০।
"প্রত্যেক গোমরাহীর পরিণাম জাহান্নাম।"
***নাসাঈঃ ১৫৭৮।
"বিদআতিরা হাউযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে।"
***মুসলিমঃ ৪২৪৩।